২০২৪-০৬-২৩ ০০:৩৩:৪৩ / Print
মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিশ্বপরিমণ্ডলে একটি কালজয়ী ইতিহাস। যে ইতিহাসের পেছনে বহু অর্জন যেমন আছে, তেমনি আছে বেদনার করুণ আর্তনাদ। বাঙালি জীবনের পরতে পরতে ত্যাগ আর শোষণ-বঞ্চনায় নিষ্পেষিত। মুক্তিযুদ্ধের আগে এবং পরে অনেক ভাঙা-গড়ার মধ্যে দিয়ে বাঙালি জাতিকে দাঁড়াতে হয়েছে মাথা উঁচু করে। সেই ব্রিটিশ থেকে পাকিস্তান স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু তৎকালীন সময়ে তার সুদক্ষ নেতৃত্বগুণে বাঙালি জাতিকে সুসংগঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
আজ থেকে ৭৫ বছর আগে বাংলার বেশ ক’জন নেতার যৌথ নেতৃত্বে ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামের রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যে ক’জন অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের মধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তখন ছিলো তার টগবগে যৌবন। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ জানুয়ারি তৎকালীন সময়ে শিক্ষার্থিদের মধ্যে দেশাত্ববোধ জাগিয়ে তোলার অভিপ্রায়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ছাত্রলীগ নামের সংগঠন। তখন এর নাম ছিলো পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ।
এটি প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে পাকিস্তানজুড়ে রাজনীতিক অঙ্গনে এক অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন বঙ্গবন্ধু। আওয়ামী মুসলিম লীগ যখন প্রতিষ্ঠা হয়, তখন তিনি কারা অন্তরীণ ছিলেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এক যৌথ সভায় বাঙালির অধিকার আদায়ের কৌশল হিসেবে সংগঠন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যখনি পাকিস্থান শাসকগোষ্ঠী বুঝতে পারলেন যে এই সংগঠন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি শক্ত অবস্থান গ্রহণ করবে, ঠিক তখনি মেধাবী রাজনীতিক শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে। শেখ মুজিব ছিলেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
সেই সময় সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যাদের অপরিসীম ত্যাগ ছিলো তারা হলেন-মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শামসুল হক প্রমুখ। প্রতিষ্ঠালগ্নে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের দিকে শামসুল হক শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান শেখ মুজিবুর রহমান। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে সংগঠনের সাধারণ সম্মেলনে শেখ মুজিব সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ১৯৫৩ থেকে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি একটানা ১৪ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের এক কাউন্সিল মিটিংয়ে শেখ মুজিব সভাপতি নির্বাচিত হয়ে সংগঠনের হাল ধরেন। সেই বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি লাহোরে পৌঁছান এবং ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি লাহোরে বিরোধী দলগুলো আহুত এক সম্মেলনে ৬ দফা দাবি পেশ করেন। তখন অনেকে এই দাবিকে ‘রাজনৈতিক বোমা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। এই ৬ দফার কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান জুড়ে নতুন করে সংগঠনের মহাজাগরণ সৃষ্টি হয়। ৬ দফার মধ্যে দিয়ে স্বাধীকার আন্দোলনের গতি তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। ছয় দফার মূল কথাটি ছিলো পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন অর্থাৎ স্বাধীনতা। এটি ছিলো মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজমন্ত্র তথা অঙ্কুর। শেখ মুজিবের ছয় দফা উত্থাপনের পর তৎকালীন পাকিস্তানের সেনা শাসক জেনারেল আইয়ুব খান অস্ত্রের ভাষায় মোকাবিলার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিডি শিক্ষা/জাআ