ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

যে কারণে ২৩ বিশ্ববিদ্যালয়কে আল্টিমেটাম দিলো ইউজিসি

বাংলাদেশ শিক্ষা ডেস্ক

২০২২-০৭-১৪ ১৭:১১:৪৪ /

ফাইল ছবি

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সর্বোচ্চ ১২ বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ২০ থেকে ২৫ বছর পেরিয়ে গেলেও অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি। অনেকেই দূরে কোথাও নামকাওয়াস্তে ক্যাম্পাস করে রাজধানীতেই তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকেও (ইউজিসি) তারা প্রকৃত তথ্য দিচ্ছে না। সাময়িক অনুমতির মেয়াদোত্তীর্ণ এমন ২৩ বিশ্ববিদ্যালয়কে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পুরোপুরিভাবে স্থায়ী ক্যাম্পাসে না গেলে তাদের নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করার আল্টিমেটাম দিয়েছে ইউজিসি।

সূত্র জানায়, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় দূরের স্থায়ী ক্যাম্পাসে লোক দেখানো কিছু কোর্স হস্তান্তর করে রাজধানীতেই ভর্তি, ক্লাসসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অবৈধভাবে একাধিক ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে ৫ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্থায়ী ক্যাম্পাসের জমি নিয়ে জটিলতা রয়েছে ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ের।

আইন অনুযায়ী, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনে ন্যূনতম ১ একর এবং অন্যান্য এলাকায় ২ একর নিষ্কণ্টক, অখন্ড ও দায়মুক্ত জমি থাকার কথা। কিন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসের কাজ শুরু করলেও তাদের আইনের শর্তানুযায়ী জমি নেই।

ইউজিসির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, ‘২৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িক সনদের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। তাদের আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়মের মধ্যে আনার জন্য আইন অনুযায়ী যা যা করার দরকার তা আমরা করব।’

ইউজিসির কাছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠানো তথ্যে দেখা গেছে, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই রাজধানীর বনানীর ১৭ নম্বর রোড, ২৩/এ নম্বর রোড, ১৮ নম্বর রোড ও ৪ নম্বর রোডে চারটি ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে। স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ৭৭ সাত মসজিদ রোড, ১৩৮ কলাবাগান ও রূপগঞ্জে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি গ্রিন রোড ও বনানীতে দু’টি ক্যাম্পাস, দি পিপলস’ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ মোহাম্মদপুর ও উত্তরায় দু’টি ক্যাম্পাস এবং শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি লালমাটিয়া ও উত্তরায় দু’টি ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে।

বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘ইউনিভার্সিটি যদি মানসম্মত হয় তাহলে যত দূরেই যাক না কেন তারা শিক্ষার্থী পাবে। তবে দেখতে হবে, স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আর্থিক সক্ষমতা আছে কি না। কারণ ইউনিভার্সিটিগুলোর ঋণ নেওয়ারও সুযোগ নেই। তবে যেসব ইউনিভার্সিটির বয়স ২০-২৫ বছর হয়ে গেছে তাদের এতদিন চলে যাওয়া উচিত ছিল। দীর্ঘদিনেও যারা যায়নি আমি বলব, তাদের গাফিলতি, অদক্ষতা বা অন্য কোনো সমস্যা ছিল।’

শেখ কবির হোসেন আরও বলেন, ‘ইউজিসি যেভাবে ঢালাওভাবে অর্ডার করছে, এতে কোনোভাবেই তারা সফল হবে না। তাদের উচিত ছিল, প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বসে তাদের সমস্যা জানা, তাদের কতদিন সময় লাগতে পারে সে অনুযায়ী পৃথকভাবে সময় দেওয়া। আমি জানি, ইউজিসির জনবলের সংকট রয়েছে। তারপরও তাদের সিস্টেমেও পরিবর্তন আনা উচিত।’

ইউজিসি বলছে, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি রাজধানীর শুক্রাবাদে ২টি অনুমোদিত ভবনে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম ইতিমধ্যে বন্ধ করেছে। তবে শুধুমাত্র কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) প্রোগ্রামে পুরাতন ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, তা ২০২৩ সালের অক্টোবরে শেষ হবে।

তবে কমিশন থেকে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ শিক্ষা কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করতে হবে। আগামী ১ জানুয়ারি, ২০২৩ তারিখ থেকে স্থায়ী ক্যাম্পাস ছাড়া অন্য ক্যাম্পাসগুলো অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

সাভারে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসের কাজ ৫৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ হবে এবং ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে নিজস্ব ক্যাম্পাসে সম্পূর্ণ শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যাবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়টি জানিয়েছে। ইউজিসি বলছে, ২০২৩ সাল থেকে স্থায়ী ক্যাম্পাস ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির অন্যান্য ক্যাম্পাস অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এসব ক্যাম্পাসে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে হবে।

আশুলিয়ায় মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মিত হয়েছে। এরপরও গুলশানে অবস্থিত ভবনে প্রশাসনিকসহ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তাদেরও আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি মোহাম্মদপুরের আদাবরে নির্মাণাধীন নিজস্ব ক্যাম্পাসে ৪টি প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে। এছাড়া ইকবাল রোডের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে তাদের অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রম চালচ্ছে।

রাজধানীর ডেমরার গ্রিন মডেল টাউনে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সটি বাংলাদেশ-এর স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণকাজ ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ হবে। স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ তিনটি ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে স্থায়ী ক্যাম্পাসে ২০২৫ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হবে বলে ইউজিসিকে জানিয়েছে। নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ বনানীর ভাড়া করা ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগং বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছ থেকে ইসলামিক মিশনের নামে লিজ নেওয়া জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করেছে, যা আইন অনুযায়ী নিষ্কণ্টক ও দায়মুক্ত জমি নয়। তাদের জটিলতা নিরসনে কমিশনের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দি পিপলস’ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ দু’টি ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিও দু’টি ক্যাম্পাস চালাচ্ছে। তাদের ২৯টি প্রোগ্রামের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে ১০টি প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে।

সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি তেজগাঁও শিল্প এলাকার স্থায়ী ক্যাম্পাসে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়াও তাদের অনুমোদনহীন চারটি ক্যাম্পাস রয়েছে। গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে ৮টি প্রোগ্রামের শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তরিত করেছে। ২০২৩ সালের মধ্যে তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাসে সব কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব বলে ইউজিসিকে জানানো হয়েছে। শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি দু’টি অনুমোদনহীন ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব বিশ^বিদ্যালয় ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ শিক্ষা কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করতে না পারলে তাদের নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে হবে।

দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি মতিঝিলে মোমেন খান মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের নামে শূন্য দশমিক ৭৫ একর জমিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা আইন অনুযায়ী বৈধ নয়। ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া ২০২৬ সালের মধ্যে এবং প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি ২০২৭ সালের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারবে বলে ইউজিসিকে জানিয়েছে। গাজীপুরে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ শুরু করেছে উত্তরা ইউনিভার্সিটি। জমির একটি অংশ নদীর জায়গা বলে জানা গেছে। অর্থাৎ আইনের শর্ত পূরণ হয় না।

ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডা) এর স্থায়ী ক্যাম্পাসের জমি ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের পাশে হওয়ায় তারা পরিবেশ ছাড়পত্র ও নকশার অনুমোদন পায়নি। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুরে নিজস্ব ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাদের ধানমন্ডিতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রিসোর্স সেন্টার রয়েছে। তাদের সবাইকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে আল্টিমেটাম দিয়েছে ইউজিসি।

আইন অনুযায়ী নির্ধারিত স্থায়ী ক্যাম্পাসের জমি নিয়ে এখনো জটিলতায় রয়েছে ১০ বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো হচ্ছে ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগং, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডা), দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া এবং উত্তরা ইউনিভার্সিটি।

বিডি শিক্ষা/জাআ

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ইংল্যান্ডে মাস্টার্স করতে  সরকারের বৃত্তি , বয়স ৪০ হলেও আবেদন

ইংল্যান্ডে মাস্টার্স করতে সরকারের বৃত্তি , বয়স ৪০ হলেও আবেদন

যে কারণে ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত

যে কারণে ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত

নিজের জীবন দিয়ে বোনকে বাঁচালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী

নিজের জীবন দিয়ে বোনকে বাঁচালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী