
২০২২-১২-২৯ ২৩:৪৬:৫৫ / Print
ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শুদ্ধাচারের গুরুত্ব অপরিসীম। শুদ্ধাচার বলতে বোঝায় নৈতিকতা ও সততা দ্বারা প্রভাবিত আচরণগত উৎকর্ষ। শুদ্ধাচারের মানদন্ডে সমাজের নীতি ও প্রথার প্রতি আনুগত্য বোঝানো হয়। ব্যক্তি পর্যায়ে শুদ্ধাচার বলতে বুঝায় ব্যক্তির কর্তব্য নিষ্ঠা,সততা ও নৈতিকতা। শুদ্ধাচার শব্দটিকে বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় শুদ্ধ + আচার। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নতি, অগ্রগতি, গ্রহণযোগ্যতা ও সুনাম নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শুদ্ধাচারের উপর।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গকে হতে হয় নিঃস্বার্থ, নির্লোভ, সৎ এবং নৈতিক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নতি, অগ্রগতি ও সুনাম তাদের নিকট সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে পরিগণিত হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ এবং প্রভাব প্রতিপত্তি অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। শিক্ষক নিয়োগ, ভর্তি প্রক্রিয়া এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় ও ব্যয়ের ক্ষেত্রসমূহে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে কোন রূপ আর্থিক সুবিধাদি গ্রহণ করা যাবে না। বরং তারা হবেন দানশীল, শিক্ষানুরাগী, সৎ, নিষ্ঠাবান ও আদর্শ ব্যক্তিত্ব।
একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিশুকাল থেকে শুদ্ধাচার এর চর্চা গড়ে তোলা উচিত। একজন শিক্ষার্থীর শুদ্ধাচার সম্পর্কিত দায়িত্বসমূহের মধ্যে রয়েছে: যথা সময়ে প্রতিষ্ঠানে আগমন ও প্রস্থান, ক্লাসে মনোযোগী থাকা, ব্যক্তিগত ও প্রতিষ্ঠানের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সহ শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা, হোমওয়ার্ক বা এ্যাসাইনমেন্ট যথাযথভাবে সম্পন্ন করা, প্রতিষ্ঠানের সম্পদ রক্ষায় যত্নবান হওয়া, সহপাঠীদের সাথে সুন্দর আচরণ করা ও সহমর্মিতা প্রদর্শন করা, শিক্ষককে সম্মান করা ও তার নির্দেশনা মানা, নৈতিকতা, দেশাত্মবোধ ও মানবিক মূল্যবোধের চর্চা করা এবং জ্ঞানার্জনে নিজেকে উৎসর্গ করা।
পক্ষান্তরে একজন শিক্ষক হবেন শিক্ষার্থীর নিকট আদর্শ ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি হবেন একজন মেন্টর, একজন মোটিভেটর এবং সর্বোপরি একজন অভিভাবক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষকের শুদ্ধাচার সম্পর্কিত দায়িত্বসমূহের মধ্যে রয়েছে: যথা সময়ে প্রতিষ্ঠান ও শ্রেণীকক্ষে আগমন ও প্রস্থান, পাঠদানে যথাযথ পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করা, প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করা, পাঠ পরিকল্পনা অনুযায়ী শিখনফল নিশ্চিত করা, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পালনে আন্তরিকতা, দাপ্তরিক কাজে একে অপরকে সহযোগিতা প্রদান করা, প্রতিষ্ঠানের সম্পদ রক্ষায় তৎপর থাকা, সকল শিক্ষার্থীকে সমান গুরুত্ব দেয়া, বৈষম্যমূলক আচরণ পরিহার করা, শিক্ষার্থীকে নৈতিকতা, দেশাত্মবোধ ও মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষায় গড়ে তোলা। পরিশেষে বলা যায়, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নতি, অগ্রগতি, গ্রহণযোগ্যতা ও সুনাম নির্ভর করে প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার সাথে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা ও শুদ্ধাচার চর্চার উপর।
লেখকঃ উপজেলা শিক্ষা অফিসার, আক্কেলপুর, জয়পুরহাট।