ঢাকা, শুক্রবার, ৯ জুন ২০২৩

যুগোপযোগী প্রাথমিক শিক্ষা: প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মোঃ মাসুদুল হাসান

২০২২-১২-৩০ ১২:৪৮:৩৯ /


যুগোপযোগী প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় সারাদেশে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, অভিভাবক, স্হানীয় বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিবর্গ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্হানীয় প্রশাসন এবং বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি। শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের জন্য উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার কোন বিকল্প নেই। প্রাথমিক শিক্ষা হলো উচ্চ ও উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার মূল ভিত্তি স্বরূপ। শিশুরা যাতে প্রাথমিক শিক্ষার কাঙ্খিত প্রান্তিক যোগ্যতাসমূহ শতভাগ অর্জন করে সুশিক্ষিত ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যেতে পারে এবং যোগ্য নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধন করতে পারে এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষকবৃন্দ বিভিন্ন ধরণের আধুনিক ও যুগোপযোগী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। 

প্রাথমিক শিক্ষায় শতভাগ শিশু ভর্তি, ঝরেপড়া রোধ এবং শিক্ষার গুনগতমান নিশ্চিতকরণে তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একে অপরের তুলনায় ভালো করার প্রবণতা ও প্রতিযোগীতা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের ইতিবাচক অগ্রগতির বহিঃপ্রকাশ। শতভাগ শিশুকে বিদ্যালয়ের আওতায় আনার জন্য শিক্ষাবর্ষ শুরুর পূর্বেই শিশু জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। শিশু জরিপ অনুযায়ী শতভাগ শিশু ভর্তির কার্যক্রম সমাপনের সাথে রয়েছে সরকারের বিনামূল্যে উন্নত মানের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম। এই কার্যক্রমের ফলে বছরের প্রথম দিনটিতেই দেশের প্রতিটি শিশুর হাতে পাঠ্যপুস্তক পৌঁছানো নিশ্চিত করা হচ্ছে। বছরের শুরু থেকেই বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা ও বার্ষিক পাঠ পরিকল্পনা অনুযায়ী পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। 

এছাড়াও রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দের সারা বছর ব্যাপী চলমান একাডেমিক সুপারভিশন ও বিদ্যালয় পরিদর্শন কার্যক্রম। সরকারের গৃহীত শতভাগ শিক্ষার্থীর জন্য উপবৃত্তি কার্যক্রম, দারিদ্রপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং প্রকল্প এবং একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন পদক্ষেপ সমাজের সকল স্তরের সকল শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করছে। এছাড়াও বিদ্যালয়ে শিশুদের উপস্থিতির হার বৃদ্ধি ও জনগণকে বিদ্যালয়ের সাথে সম্পৃক্তকরণের জন্য রয়েছে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের হোম ভিজিট, অভিভাবক সমাবেশ, মা সমাবেশ, পিটিএ সভা, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির নিয়মিত সভা। শিশুদের  বিদ্যালয়ের প্রতি আকৃষ্ট করতে বিদ্যালয় ভবন, ছাদ, করিডোর ও শ্রেণিকক্ষগুলোকে  সুসজ্জিত ও আকর্ষণীয় করা  হয়েছে। 

বিদ্যালয় গুলোতে শহীদ মিনার, পতাকা বেদী, সততা স্টোর, মহানুভবতার দেয়াল, লাস্ট এন্ড ফাউন্ড বক্স, কন্যা শিশু সুরক্ষা সেল, সুশাসন ও শুদ্ধাচার দর্পণ, পরামর্শ বক্স, স্কুল কালচারাল ক্লাব, স্কুল ডিবেটিং ক্লাব, ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, লাইব্রেরী, শিশুপার্ক স্থাপনসহ খেলাধুলা, বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের বিভিন্ন উপকরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদ্যালয়গুলোর পরিবেশ আকর্ষণীয় করতে ফুল, ফল ও সব্জী বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে চালুকৃত মিড ডে মিল কার্যক্রম, আনন্দ পাঠের আসর, মেধা পুরস্কার ও সেরা উপস্থিতি পুরস্কারের প্রচলন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড শিশুদের বিদ্যালয়ের প্রতি আরও বেশি আকৃষ্ট করে তুলছে। প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালুকরণ বিদ্যালয়ে শতভাগ শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রমকে সহজতর করেছে। শিক্ষক কর্মকর্তাবৃন্দের বিভিন্ন ধরণের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান ও দক্ষতা শিশুর পাঠদান কার্যক্রমকে আনন্দদায়ক ও শিশুর মেধাবিকাশের প্রক্রিয়াকে অধিক ফলপ্রসু ও ত্বরান্বিত করছে। এছাড়া বিদ্যালয় গুলোতে কাব স্কাউট কার্যক্রম, ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রম, স্টুডেন্ট কাউন্সিল কার্যক্রম ও স্টুডেন্ট ব্রিগেড কার্যক্রম শিশুদের মাঝে নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা, সমাজ সচেতনতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করছে। 

আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার এ সকল সমন্বিত ও যুগান্তকারী পদক্ষেপসমূহ প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত হওয়ার ফলে প্রাথমিক শিক্ষার প্রান্তিক যোগ্যতাসমূহ অর্জন সহজতর হচ্ছে। শিশুদের মন থেকে বিদ্যালয় ভীতি ও পরীক্ষা ভীতি দূর হচ্ছে। বিদ্যালয়ে শিশুদের উপস্থিতির হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর হার হ্রাস পাচ্ছে। শিশু শ্রম ও বল্য বিবাহ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে।পরিশেষে বলা যায়, শিশুদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, নৈতিক, মানবিক নান্দনিক, আধ্যাত্মিক ও আবেগিক বিকাশ সাধনে; সর্বোপরি কোমলমতি শিশুদের সৎ, যোগ্য, আত্মমর্যাদাশীল  ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এবং যুগোপযোগী ও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে
বাংলাদেশ কাঙ্খিত লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে।

লেখকঃ মো: মাসুদুল হাসান,উপজেলা শিক্ষা অফিসার, আক্কেলপুর, জয়পুরহাট।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কর্তৃপক্ষকেও হতে হবে ডেডিকেটেড

প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কর্তৃপক্ষকেও হতে হবে ডেডিকেটেড

পরিবর্তন: শাবলু শাহাবউদ্দিন

পরিবর্তন: শাবলু শাহাবউদ্দিন

প্রাথমিক শিক্ষায় ইনোভেশন: স্বল্প ব্যয়ে ডিজিটাল এ্যাটেন্ডেন্স ও ই-মনিটরিং

প্রাথমিক শিক্ষায় ইনোভেশন: স্বল্প ব্যয়ে ডিজিটাল এ্যাটেন্ডেন্স ও ই-মনিটরিং