ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩

প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কর্তৃপক্ষকেও হতে হবে ডেডিকেটেড

টি এম জাকির হোসেন

২০২৩-০৩-০৯ ১৪:৫৪:৪২ /

ফাইল ছবি:টি এম জাকির হোসেন


সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব মহোদয়ের এক বক্তব্যে সত্য প্রমাণিত যে,শিক্ষক ডেডিকেটেড হতে উচ্চ শিক্ষিত, গ্রেড পরিবর্তন যেমন শর্ত নয়,ঠিক তেমনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ডেডিকেটেড হলে প্রাথমিক শিক্ষক,  শিক্ষার্থী ও শিক্ষায় সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে অর্থ কোন শর্ত নয়।

বরাবর সচিব মহোদয়, 
শিক্ষক যখন তার পেশায়  সন্তুষ্ট, সামাজিক মর্যাদায় ধন্য,অর্থনৈতিক বিড়ম্বনা থেকে স্বচ্ছতা পাবে, ঠিক তখনই হতে পারে শিক্ষক তার পেশাতে ডেডিকেটেড। কেননা,অন্যান্য পেশার মতো আইন করে  শারীরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলেও, শিক্ষায় শিক্ষক সন্তোষে নিবেদিত না হলে কাজের মানে ফাঁকি দেওয়া অনেক সহজ!

একজন শিক্ষকই যখন মানসম্মত শিক্ষায় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রথম ও শেষ হাতিয়ার, উপাদান, উপকরণ, ঠিক তখনই বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষক সমতার সমীকরণে না এসে বৈষম্যের জাতাঁকলে পিষ্ট হয়ে।  

মাননীয় মহোদয়, 
শিক্ষককে যখন তার শ্রেণীকক্ষে শিক্ষাদানে বাধ্য করতে একাধিক কৌশলের সিদ্ধান্তে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের চিঠি করে তদারকি করা হয়,তখন শিক্ষক তার দায় এড়াতে দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে সরে এসে দায় সাড়া হয়ে সেরা হয়। সেখানে শিখন নিশ্চিতের দায়িত্ব কাঁধে না নিয়ে দায়কে এড়িয়ে চলে।

শিক্ষককে যখন রেজিস্ট্রার মেইনটেইন করতে তদারকি কর্মকর্তা শোকজ করেন,নিজেকে ক্ষমতার প্রমাণের নজির রাখতে ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে দোসর সেজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত হতে সোচ্চার হয়,ঠিক তখনই  দেশের হাজার হাজার ডেডিকেটেড  শিক্ষক মুখ ফিরিয়ে নেয় , ঘুম ভেঙ্গে  যায় ডেডিকেটেডে থাকা স্বপ্ন থেকে।

দেখেছি ওয়ান ডে ওয়ান ওয়ার্ড শিখনের রেজিস্ট্রার খাতা সাজাতে শ্রেণী পাঠ ছেড়ে শোকজ এড়াতে মুগ্ধ হয়েছে ক্লাস ছেড়ে দায় এড়াতে, দেখেছি শিক্ষককে ৯ টার সময়ে বাধ্য হয়ে  বিদ্যালয়ে পৌঁছে সকালের খাবার মুখে তুলতে শ্রেণি শিক্ষাথীদের হৈচৈ করতে। নামজের বিরতি দুই শিফটের সময়ের বৈষম্যের স্বীকারে শিক্ষকেরো প্রতিকারক হতে না পারলেও তারা ডেডিকেটেড থেকে মুখ ফিরিয়ে ঠিক নিতে পারে। কেননা,শ্রেণী কক্ষ স্বল্পতা ও শিক্ষক স্বল্পতার দায়টি থাকে না শিক্ষকের হাতে।
শিক্ষক যদি ডেডিকেটেড না হয়ে ক্লাস পিরিয়ডের সময়ে শিখন যোগ্যতা অর্জনে ব্রত না থেকে ঘড়ির কাঁটায় চোখ রাখে, শিক্ষা তখন লাজুক হবে এটিই সত্য। 

কর্তৃপক্ষের দ্রুত সিদ্ধান্ত সপ্তাহের সময় যখন বছর পেরিয়ে যায়,তখন শিক্ষকের মনে পরিকল্পনার সুফলের আবেগগুলোর ধীরে ধীরে স্ফীতি হয়ে প্রতিক্রিয়া পড়ে ডেডিকেটেডে।

মানবতা যেমন আইনের কাছে সাংঘর্ষিক হয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে থাকে, আন্তরিকতা যখন দায়িত্বের অবহেলাতে  দায় সারিয়ে বাহবা পেতে থাকে, 
ঠিক তখন শিক্ষা ও শিক্ষামান নিয়ে ছলনা চলে।

এটি সবাই স্বীকার করেন যে,শিক্ষকতা এটি মহৎ পেশা। কিন্তু এই মহৎ পেশায় নিয়োজিত হয়ে যখন মানবতা থেকে দূরে থাকতে হয়,  অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হয়, মতামত প্রেরণে যখন অপমানিত হতে হয় বা সৃজনশীলতার মতো মেধাকে তাচ্ছিল্য করে নির্দিষ্ট ফরমে আঁটানো হয়,
যখন কানে আসে প্রাথমিক শিক্ষক মানে দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করা, প্রাথমিক শিক্ষক মানে ছোট ছোট নিষ্পাপ মনের শিশুর সাথে কাজ করে ছোট মনে মানুষ হওয়া, প্রাথমিক শিক্ষক মানে দক্ষতার সময় পেরিয়ে অতি সাধারণের কাছেও পাগল বলে পরিচিত হওয়া, প্রাথমিক শিক্ষক মানে এগিয়ে নেওয়া নারীদের কাছে তাচ্ছিল্য হয়ে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া বিয়ের বাজারে ঘটক পাখিরও বিড়ম্বনা। প্রাথমিক শিক্ষক মানে সবকিছুই মেনে নেওয়া, জেনেশুনে এসে বৈষম্যর স্বাদ গলাধঃকরণ করে তৃপ্তি পাওয়া।

 ঠিক এমন সময়ই অনেক স্বপ্ন নিয়ে আসা শিক্ষক ডেডিকেটেডের রাস্তা ছেড়ে দায়ে এড়িয়ে সময় কাটানো দিকে ধাবিত হয়। বাস্তবতায় থাকে মানিয়ে নিয়ে নিজেকে অভিযোজিত করা।

যথাযথ  কর্তৃপক্ষ, 
শিক্ষকেরা কর্তৃপক্ষের কাছে এমন কিছু চেয়ে বসেনি যে,তা বাস্তবায়নে রাজস্বের তহবিলে অতিরিক্ত অর্থের জোগানি দিতে হবে, তা নয়। শুধু চেয়েছে শিক্ষকের প্রতি কর্তৃপক্ষের ডেডিকেটেড। 

* তারা চেয়েছে সহজ শর্তে বিদ্যালয় বদলাতে *শেষ বয়সে এসে পদোন্নতির মালা গলায় নিতে ** একই বিদ্যালয়ে বছরের পর বছর না থাকতে, শিক্ষার্থীর বয়স,রুচির কথা ভেবে বিদ্যালয়ের সময় সূচি ও ছুটির সমতা করতে, * একশিফট, দুই শিফট থেকে মুক্তি পেতে * কর্তৃপক্ষের পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত দ্রুতই বাস্তবায়ন হতে * শিক্ষককে চাকুরী বিধির কর্মচারী না ভেবে শিক্ষক হিসেবে মর্যাদা পেতে,  ইত্যাদি এমন অনেক বিদ্যালয় পর্যায়ে সমস্যার কারণে শিক্ষক পারেনা ইচ্ছে থাকা স্বত্তেও ডেডিকেটেড হতে। 
সামাজিক অবস্থানে শিক্ষককে এতটাই পরাধীনতা করা হয়েছে যে, সব দায় যেন শিক্ষকের। জবাবদিহিতা নাই শিক্ষার্থীদের, অভিভাবকদের, কর্মকর্তাদের।

 সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা আর দীর্ঘস্থায়ী সিদ্ধান্তে, শিক্ষক ও তার সাফল্য নিয়ে প্রতিযোগিতার স্বাধীনতা পেতে  প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ডেডিকেটেড হলেই এগিয়ে যাবে মানসম্মত শিক্ষা। ডেডিকেটেড হবে শিক্ষক, দায় থেকে মুখ ফিরিয়ে দায়িত্ব আর কর্তব্যে এগিয়ে যাবে প্রাথমিক শিক্ষক, 
এটি আমার বিশ্বাস।


লেখক: সিনিয়র সহ-সভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটি।
বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ-১২০৪৮।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কর্তৃপক্ষকেও হতে হবে ডেডিকেটেড

প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কর্তৃপক্ষকেও হতে হবে ডেডিকেটেড

পরিবর্তন: শাবলু শাহাবউদ্দিন

পরিবর্তন: শাবলু শাহাবউদ্দিন

প্রাথমিক শিক্ষায় ইনোভেশন: স্বল্প ব্যয়ে ডিজিটাল এ্যাটেন্ডেন্স ও ই-মনিটরিং

প্রাথমিক শিক্ষায় ইনোভেশন: স্বল্প ব্যয়ে ডিজিটাল এ্যাটেন্ডেন্স ও ই-মনিটরিং