
২০২৩-১০-০৯ ১৪:৫৪:১০ / Print
সুন্দর পরিপাটি স্কুল ড্রেস,কাঁধে বাহারী ব্যাগ,হাতে টিফিনবক্স, বক্স নিয়ে পাশে মা যাচ্ছেন। শিক্ষক যা পরাচ্ছেন মা সেখানে বসে দেখছেন, যখন তার সন্তানটি পারছে না তখন তিনি নিজের আত্মসম্মান নিয়ে পারগ শিশুর মায়ের কাছে মনে মনে হেরে যাচ্ছেন।। তিনি বাড়ি গিয়ে সংসারের সব কাজ একদিকে অন্যদিকে তোতাপাখির মত পড়া মুখস্থ করাচ্ছেন। অন্য মায়েদের চেয়ে এগিয়ে থাকবার জন্য তিনি নিজেই প্রতিযোগিতায় নামেন। বোর্ড বইয়ের বাইরে কিছু বই ও মাসিক একটা সিলেবাস তিনিসহ তার শিশুর মুখস্থ। ঐ সিলেবাসের বাইরে কিছু আসে না তাই পরীক্ষায় প্রতি বিষয়ে একশোতে একশ।কোন রকমে ৯৯ বা ৯৮ পেয়ে গেলে মায়ের ঘুম হারাম শিশু টির জন্য জোটে চড়,থাপ্পর ও তিরস্কার। শিশুটি ধীরে ধীরে বইয়ের কীট হয়ে ওঠে। তার থাকে না কোন খেলাধূলা, তার জন্য গল্প ও আরব্য রজনীর কাহিনী থাকে না,থাকে শুধুই এপ্লাসের প্রতিযোগিতা।
অন্যদিকে পড়নে একটা সাধারণ মানের স্কুল ড্রেস, পায়ে হয়ত ক্যাডস আছে কি নেই, টিফিনের জন্য মায়ের হাতের সকালে খাওয়া খাবারের একাংশ নিয়ে একা একা স্কুলে আসে যায় সে সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিশু।সে দৈনিক সমাবেশে দাঁড়ায়, সমাজের সকল শ্রেণির শিশুর সাথে সে শ্রেণিকক্ষে বসে শিক্ষকের কাছ থেকে পড়া নিচ্ছে। তার মা দাঁড়িয়ে থাকে না,নেই মায়ে মায়ে প্রতিযোগিতা। শুধুমাত্র শিক্ষকদের চেষ্টায় তার বয়স, চাহিদা ও সামর্থ্য অনুযায়ী সে শিখতে শুরু করে। সিলেবাস মুখস্থ করে সে হয়ত একশতে একশ পায় না কিন্ত ধীরে ধীরে বয়স বাড়ার সাথে সাথে সে আস্তে আস্তে বিকশিত হয়। সে স্কুলে না এলে শিক্ষক তার বাড়িতে গিয়ে ভিজিট করে। তার জন্য প্রতিবছর স্কুলে, ইউনিয়নে,উপজেলা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার ব্যবস্হা থাকে। একসময় সে জাতীয় পর্যায়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে। তোতাপাখির মত সিলেবাস মুখস্থ করে সে শুধু পরীক্ষায় ভাল নম্বর পাওয়ার প্রতিযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যায় না তার সামাজিক,মানসিক,শারীরিক, আবেগিক,মানবিক ও নান্দনিক বিকাশের ফলে পরীক্ষায় ফলও ভাল হয়। সে বিজ্ঞান মনস্কতায়, সৃজনশীলতায় ও দেশপ্রেম অর্জন করে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে উদ্বুদ্ধ হয়। ভাল কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে চান্স হয়ে জীবনে অনেক বড় হয়।
আর ঐ সিলেবাস ধরে ধরে কিন্ডারগার্টেনে পড়ুয়া শিশুটি একশতে একশ পাওয়ার প্রতিযোগিতা করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে বই তার কাছে ভীতিকর হয়ে পড়ে। শুধুমাত্র পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়ার প্রতিযোগিতা তাকে তার অন্যান্য বিকাশগুলো হতে দেয় না। তার স্কুলের ছুটি কম বলে সে আত্মীয় বাড়ি যেতে পারে না। অনেক সময় অসামাজিক হয়ে যায়। কিছু ছেলে মেয়ে হয়ত বড় হয়ে ভাল কলেজ ইউনিভার্সিটিতে চান্স পায় বটে তবে অধিকাংশ ছেলেমেয়েদের অভিভাবকের অর্থের দৌড় থাকায় শেষ আশ্রয় হয় প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে। সুতরাং কিন্ডারগার্টেন নয় সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষাই শিশুর প্রকৃত বিকাশে সহায়ক।
লেখক: জাকিয়া ইয়াসমিন,প্রধান শিক্ষিক,পূর্ব বাঘাডোবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,মেলান্দহ,জামালপুর।