ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

যাদের আত্মবিসর্জনের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি মাতৃভাষা বাংলা

জাফর আহম্মেদ

২০২৪-০২-০১ ০১:২৬:৫৫ /

ফাইল ছবি

বছর পেরিয়ে আবারও ফিরে এসেছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের এ মাসেই ভাষার অধিকার আদায়ে আত্মবিসর্জন দিয়েছিলেন ভাষাশহীদেরা। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় অমূল্য প্রাণ সঁপে দিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা শহীদেরা। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি/ ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু-গড়া এ ফেব্রুয়ারি ।

তাদের প্রাণের বিনিময়েই চূড়ান্ত পরিণতি পেয়েছিল ভাষা আন্দোলন। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি সৃষ্টি করেছিল মায়ের ভাষায় কথা বলার নতুন ইতিহাস। পরবর্তীতে হয়ে উঠেছিল অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের বহ্নিশিখা। ইতিহাসের বাক ফেরানো সেই রক্তঝরা পথরেখাতেই একে একে এসেছে ছেষট্টির ছয় দফা,  ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনে বিজয় অর্জন এবং একাত্তরের স্বাধীনতা।

এমনকি নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অনুপ্রেরণার উৎস হয়েছে মাতৃভাষার সংগ্রাম।  সেই সুবাদে আজও বাঙালির অস্তিত্বের সংকটে-সংগ্রামে আলোকরেখা হয়ে সামনে আসে একুশে ফেব্রুয়ারি।

ফেব্রুয়ারি মানেই অঙ্গীকারের মাস, প্রত্যয়বদ্ধ হবার মাস। ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে সমাজে, রাষ্ট্রে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শপথ নেওয়ার মাস ফেব্রুয়ারি। তবে আক্ষেপের বিষয় হচ্ছে ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পেরুলেও অফিস-আদালত.  শিক্ষাক্ষেত্র, বিভন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডসহ সর্বস্তরে  বাংলাকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াসটি পূরণ হয়নি। রয়ে গেছে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার আক্ষেপ। তাই এবারও থাকছে যাপিত জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার সেই অঙ্গীকার। প্রতিবছরই ভাষার মাসকে ঘিরে থাকে নানা আয়োজন। তেমনই এক আয়োজন বাঙালির মননগত উৎকর্ষের প্রতীক অমর একুশে বইমেলা। আজ বৃহস্পতিবার সশরীরের উপস্থিত থেকে মেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের বইমেলার অন্যতম গুরুত্বর্পূণ বিষয়টি মেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে সরাসরি বাংলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে হয়েছে।

অর্থাৎ  মেলার বিন্যাস থেকে কোথায় কি থাকবে না থাকবে-সবটুকুই একাডেমির জনবলের মাধ্যমে সম্পন্ন  করা হয়েছে। এ জন্য একাডেমির নিয়োগকৃত নক্সাবিদ থেকে স্থপতি ও অংকন শিল্পীরা সম্মিলিতভাবে কাজ করেছেন। গত বছরের মতো এবারও মেলার প্রবেশদ্বার রয়েছে তিনটি। এগুলো হলো টিএসসির উল্টোপিঠের প্রবেশদ্বার, বাংলা একাডেমির উল্টোদিকের প্রবেশদ্বার ও রমনা কালী মন্দিরের নিকটবর্তী প্রবেশ পথ। এই তিন প্রবেশপথের মধ্যে টিএসসির প্রবেশদ্বার থেকেই শুরু হবে মেলা।

এই অংশের ডান দিকের পুরো অংশজুড়ে থাকবে সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্যাভিলিয়ন ও স্টল। আর উদ্যানের বাম দিকের অংশে ফায়ার সার্ভিসসহ সেবামূলক ও স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এবার মেলার অন্তর্ভুক্ত মুক্ত মঞ্চে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে মাসব্যাপী নাট্যোৎসব।  এবার বলি একুশের সেই দ্রোহকালের কথা। মূলত বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির সূচনাটা হয়েছিল ১৯৪৭ সালে। সাতচল্লিশের ১৭ মে হায়দারাবাদে এক উর্দু সম্মেলনে মুসলিম লীগ নেতা চৌধুরী খালিকুজ্জামান ঘোষণা দেন, ‘পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা হবে উর্দু’। তার সঙ্গে সুর মেলান আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন।

প্রতিবাদে ২৯ জুলাই ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ‘আজাদ’ পত্রিকায় বলেন, বাংলাই হওয়া উচিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা, তবে দুটি রাষ্ট্রভাষা করা গেলে উর্দুর কথা বিবেচনা করা যায়। এমন বাস্তবতায় পাকিস্তান গঠনের পর থেকে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন আরও জোরদার হতে থাকে। ওই বছরের ২৭ নবেম্বর করাচিতে পাকিস্তান শিক্ষা সম্মেলনে পাকিস্তান গণপরিষদের কাছে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ও প্রাদেশিক সরকারের কাজ চালাবার মাধ্যম রূপে মেনে নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। একইসঙ্গে সমগ্র পাকিস্তানে প্রাথমিক শিক্ষায় উর্দুকে এক বছরের জন্য বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবও করা হয়।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন তমদ্দুন মজলিশের সম্পাদক আবুল কাসেম। বক্তৃতা করেন মুনীর চৌধুরী, আব্দুর রহমান, কল্যাণ দাশগুপ্ত, এ কে এম আহসান, এস আহমদ প্রমুখ।

বিডি শিক্ষা/জাআ

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

মহার্ঘ ভাতা ও নবম পে-স্কেল দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা

মহার্ঘ ভাতা ও নবম পে-স্কেল দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা

১৫ বছর চাকরি করলে সব সুবিধাসহ স্বেচ্ছায় অবসরের সুযোগ

১৫ বছর চাকরি করলে সব সুবিধাসহ স্বেচ্ছায় অবসরের সুযোগ

মহার্ঘ ভাতা নিয়ে নতুন যে খবর দিলেন জনপ্রশাসন সচিব

মহার্ঘ ভাতা নিয়ে নতুন যে খবর দিলেন জনপ্রশাসন সচিব