
২০২৪-০৩-৩১ ০২:২৯:০৮ / Print
মরিচবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে ২০২৩ সালের ১ জুন থেকে কর্মরত আছেন লিয়াকত আলী জমাদ্দার। কিন্তু গত ৯ মাস যাবৎ কোনো সরকারি বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।
লিয়াকত আলী জমাদ্দার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি চারটি প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করেছি। যতবার নিয়োগ হয়েছে, ততবার নতুন করে এমপিও হয়েছে। কিন্তু গত ৯ মাস যাবৎ কোনো বেতন ভাতা পাচ্ছি না। আমার বাবা মারা গেছেন। আমি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে টাকা না থাকায় চিকিৎসা করাতে পারছি না। আমার সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ। এর থেকে আর খারাপ কি হতে পারে।’ শুধু লিয়াকত আলী নন বরিশাল বিভাগের ৬০০ বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কমপক্ষে দেড় হাজার শিক্ষক লিয়াকত আলীর মতোই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সমাজে শিক্ষক হওয়ায় লোক লজ্জায় কাউকে বলতে পারেন না এমন অসহ্য যন্ত্রণার কথা।
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার হাজী এম এ রশিদ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে নলছিটি পঞ্চগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২২ সালের ৭ জুলাই বদলি হয়ে আসেন হুমায়ুন কবির। তখন থেকে আজ পর্যন্ত একটি টাকাও বেতন-বোনাস পাননি তিনি।
হুমায়ূন কবির বলেন, ‘নতুন প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পরে কোনো বেতন পাচ্ছি না। ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অসংখ্যবার জানিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। দুই বছর কোনো শিক্ষক বেতন না পেলে তিনি কীভাবে চলেন তা কেউ বিবেচনা করে দেখেন না। শিক্ষকরাতো চুরি করতে নামতে পারেন না। এজন্য পেটে গামছা বেঁধে দিন পার করি। ক্ষুধা লাগলেও কাউকে বলতে পারি না।’
বরিশালের মোফাজ্জেল হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সামিনা আফরোজ বলেন, ‘আমাদের স্কুলের সাত শিক্ষক কর্মচারী গত দুই বছর যাবৎ এমপিওভুক্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উপ-পরিচালকের কাছে এমপিওভুক্তির ফাইল আটকে থাকায় আমরা গত দুই বছর যাবৎ বেতন ভাতা পাচ্ছি না। আমরা সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না। উপ-পরিচালক শিক্ষকদের ফাইলগুলি ঠিক না করায় বাধ্য হয়ে ডিজি অফিসে ছোটাছুটি করে আমরা বিভাগের মাত্র ২২ জনের ফাইল ঠিক করতে পেরেছি। কিন্তু এখনও প্রায় দেড়হাজার শিক্ষক এই সমস্যায় আছেন।’
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি বরিশাল আঞ্চলিক শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন বা স্কেল পরিবর্তন বিষয়ে ৩৮ ধরনের কাগজপত্র লাগে। এর ফলে এই প্রক্রিয়াটি জটিলতর রূপ নিয়েছে। তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে আবেদনগুলো বাতিল করায় শিক্ষকরা অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের বেতন ভাতা আটকে থাকে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে এই বিষয়টির সুরাহা হলেও বরিশাল বিভাগে এটি আটকে আছে। অনিয়মের কারণে দেড় হাজারের মতো শিক্ষক বেতন ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের সংসার চলছে না।’
এদিকে, দেড় হাজার শিক্ষকের বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে শনিবার (৩০) মার্চ দুপুরে একটি সাংবাদিক সংগঠনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এমপিও বঞ্চিত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক আবদুল জব্বার খান। এসময় বিভিন্ন উপজেলার ২২ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
আবদুল জব্বার খান জানান, ঝালকাঠীর নলছিটি, কাঠালিয়া, বরিশাল সদর, পিরোজপুরের নেছারাবাদসহ বিভাগের বিভিন্ন উপজেলার ৬০০ স্কুলের ১৫০০ শিক্ষক বেতন ভাতা থেকে গত ৬ মাস থেকে তিন বছর পর্যন্ত বঞ্চিত হয়ে আছেন। জুনিয়র পদ থেকে সিনিয়র পদ বা এক স্কুল থেকে আরেক স্কুলে গেলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেনের কাছে আটকে যাচ্ছে ফাইল। তিনি শিক্ষকদের ফাইলগুলো দিনের পর দিন আটকে রাখেন। তুচ্ছ কারণে ফাইলগুলো বাতিল করে দেওয়া হয়। এর ফলে হাইস্কুলের শিক্ষকরা চাকরি করলেও এমপিও থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা ঈদ পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। এরমধ্যে সকলের বেতন-ভাতা না এলে ঈদের পর উপ-পরিচালকের কার্যালয় ঘেরাও করা হবে। পাশাপাশি আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।’
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বরিশাল অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘হয়রানির বিষয়টি আমি জেনেছি। তবে উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেনের কাছে হাইস্কুলের এতো ফাইল আটকে আছে তা আমিও জানতাম না। একজন শিক্ষক পূর্বে বেতন ভাতা পেতেন। স্কুল পরিবর্তন, জুনিয়র থেকে সিনিয়র হিসেবে পদায়ন হলে তার বেতন ভাতা বন্ধ থাকবে, এটা কাম্য নয়। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি তুলে ধরবো।
বিডি শিক্ষা/জাআ