
২০২৪-০৪-১৮ ০১:১০:৩৫ / Print
শুরুতেই কৃতজ্ঞচিত্তে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে,কারণ ডিজিটাল স্মার্ট পদ্ধতি ও স্বচ্ছতার সাথে অন্তঃউপজেলা অনলাইন শিক্ষক বদলি (প্রধান ও সহকারী) ২০২৪ কার্যক্রম প্রায় সফলভাবে সম্পন্ন করায়।
সবকিছুর পরও কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে IPEMIS পোর্টাল বা সার্ভার জটিলতার কারনে অনেক সম্মানিত শিক্ষক বদলি আবেদন যথাসময়ে সাবমিট করতে পারেননি! একটি বৃহৎ কর্মযজ্ঞে টুকিটাকি ভুলত্রুটি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এবং আগামীতে দৃশ্যত: যা ভুলত্রুটি তা অবশ্যই কর্তৃপক্ষ সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহন করবেন এ আমার বিশ্বাস।
বদলির ক্ষেত্রে স্কোরিংয়ে পরিমার্জন অপরিহার্য কেননা জ্যেষ্ঠতার স্কোরিং তুলনামূলক অপ্রতুল এবং মহিলা শিক্ষকের বদলির স্কোরিং প্রয়োজনের তুলনায় ঢের যা বদলির ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে।
আমার বিনীত প্রত্যাশা পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবেন।
বিদ্যালয়ের কর্মকালের বিষয়টিও সংশোধনের দাবি রাখে কারন অনেক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বদলি প্রত্যাশি বিদ্যালয়ে কর্মকাল গণনা করায় অনেক কনিষ্ঠ শিক্ষক বদলির জন্য নির্বাচিত হয়েছে যা জ্যেষ্ঠতার প্রতি অবমূল্যায়ন করার সামিল।আশা করি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টিও সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহন করবেন।
সর্বোপরি অনলাইন শিক্ষক বদলি (প্রধান ও সহকারী) স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন হয়েছে আমার দৃষ্টিতে,যার বাস্তব উদাহরণ আমরা দুইজন সহকারী শিক্ষক বদলির আবেদন করেছিলাম। আমার বিদ্যালয়ে কর্মকাল কম থাকায় আমার স্কোর কম (কর্মরত বিদ্যালয়ে যোগদান ১৬/১/২০২০) এবং তাজ উদ্দিন সহেবের নিয়োগ (আমার যোগদানের পূর্বে কর্মরত বিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত) অনুযায়ী কর্মকাল বেশি হওয়ায় তার কর্মকালের স্কোর বেশি।এবং দূরত্বের ক্ষেত্রে আমার গুগল মানচিত্র অনুযায়ী স্থায়ী ঠিকানা থেকে কর্মরত বিদ্যালয়ের দূরত্ব ৮.২ কি: মি:। আবেদনে দূরত্ব দিয়েছিলাম ৮ কি: মি: এবং তাজ উদ্দিন সাহেবের আবেদনে দূরত্ব ভুলবশত ১১ কি:মি: দিয়েছিলেন। সে হিসেবে তাজ উদ্দিন সাহেবের দূরত্বের স্কোর বেশি হওয়ার কথা, তাই না? কিন্তু তাঁর দূরত্ব গুগল মানচিত্র অনুযায়ী ৬.৭ কি: মি: সঙ্গত কারনে তাঁর দূরত্ব গুগল থেকে সয়ংক্রীয়ভাবে সঠিক দূরত্ব অনুযায়ী দূরত্বের স্কোর হয়েছে।
পারষ্পরিক বদলি:
অনলাইন শিক্ষক বদলির ক্ষেত্রে পারষ্পরিক বদলির পদ্ধতি বদলি পোর্টালে অন্তর্ভুক্ত আবশ্যক কেননা এই পদ্ধতি না থাকায় বহু শিক্ষক কাঙ্ক্ষিত বিদ্যালয়ে পারষ্পরিক বদলির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। পারষ্পরিক বদলিতে কোন বিদ্যালয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। পারষ্পরিক বদলির পদ্ধতি যুক্ত না করলে ভবিষ্যতে পারষ্পরিক বদলি থেকে আবারো অনেক শিক্ষক বঞ্চিত হবেন।এই পদ্ধতি অন্তর্ভুক্তের জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
বিশ্লেষণমূলক স্কোরিং :
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলির ক্রাইটেরিয়ার স্কোর যেভাবে হিসাব করা হয়েছে :--
ধরুন একটি বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষক বদলির আবেদনপত্র জমা দিয়েছে। এই ৫ জন শিক্ষক স্থায়ী ঠিকানা থেকে কর্মরত বিদ্যালয়ের দূরত্বে ভিন্নতা রয়েছে।
১ম জন ১৬ কিলোমিটার
২য় জন ২০ কিলোমিটার
৩য় জন ১২ কিলোমিটার
৪র্থ জন ২২ কিলোমিটার
৫ম জন ১৫ কিলোমিটার
দূরত্বের জন্য মোট নম্বর ২০
এই ৫ জনের মধ্যে সবচেয়ে দূরত্ব বেশি হচ্ছে ৪র্থ তম জনের। তিনি পাবেন ২০ নম্বরের মধ্যে ২০ নম্বর।
বাকি চারজনের হিসাব এভাবে
১ম = ১৬ কিলোমিটার =১৬*২০/২২=১৪.৫৫ নম্বর
২য়= ২০ কিলোমিটার = ২০*২০/২২= ১৮.১৮ নম্বর
৩য়= ১২ কিলোমিটার = ১২*২০/২২=১০.৯১ নম্বর
৫ম= ১৫ কিলোমিটার =১৫*২০/২২=১৩.৬৪ নম্বর
একটি বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষক বদলির আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন। এই ৫ জন শিক্ষকের কর্মকাল কর্মরত বিদ্যালয়ের ভিন্নতা রয়েছে।
১ম জন= ৫ বছর
২য় জন= ৭ বছর
৩য় জন= ৩ বছর
৪র্থ জন= ৪ বছর
৫ম জন= ৬ বছর
কর্মকালের জন্য মোট নম্বর ২৫
এই ৫ জনের মধ্যে কর্মকাল বেশি হচ্ছে ২য় তম জনের। তিনি পাবেন ২৫ নম্বরের মধ্যে ২৫ নম্বর।
বাকি চারজনের হিসাব এভাবে
১ম= ৫ বছর =৫*২৫/৭=১৭.৮৬ নম্বর
৩য়= ৩ বছর = ৩*২৫/৭=১০.৭১ নম্বর
৪র্থ = ৪ বছর = ৪*২৫/৭=১৪.২৯ নম্বর
৫ম= ৬ বছর =৬*২৫/৭=২১.৪৩ নম্বর, স্কোরিং বিস্তারিত ফেসবুক থেকে সংগৃহীত]
যেহেতু সারা বাংলাদেশের অনেক শিক্ষক (প্রধান+সহকারী) সার্ভার জটিলতার কারণে বদলির আবেদন সাবমিট করতে পারেননি কিংবা ওটিপি পাননি, প্রধান শিক্ষক অগ্রায়ন করতে পারেনি,আবার প্রধান শিক্ষকের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা হয়েছে,সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার অগ্রায়ন করতে পারেননি তাই তাঁদের প্রতি মানবিক হয়ে সদয় বিবেচনায় আন্ত:বিভাগ বদলি কার্যক্রম শেষে সারা বাংলাদেশে সার্বিক অনলাইন শিক্ষক বদলির সুযোগ দানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহুল আলোচিত এবং অনেক শিক্ষকের অভিযোগ তুলেছেন সবকিছু ঠিকঠাক থাকার পরও না কি অনেক উপজেলায় উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে বদলি আবেদন বাতিল করা হয়েছে,আবার অনেকে ভুল তথ্য দেয়ার পরও না কি আবেদন অগ্রাহয়ন করা হয়েছে (আমার ব্যক্তিগত মতামত না)। এ বিষয়টিও আমুলে নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করতে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
পরিশেষে আবেগ দিয়ে নয় বিবেক দিয়ে এবারের অনলাইন শিক্ষক বদলির মূল্যায়ন করতে সকলকে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদসহ স্কোরিংয়ে উপরোক্ত বৈষম্যগুলো নিরসনের জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
কলামিস্ট:
মো: ফারুক হোসেন, ভার: প্রধান শিক্ষক,
বেলওয়া আদিবাসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর।