ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

শিক্ষক ও শিক্ষকতার পেশা নিয়ে আমার ভাবনা

পাঠকের কলাম

২০২৪-০৯-১৫ ২৩:৪১:১৯ /

একজন সফল মানুষের পেছনে শিক্ষকের যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে তা নতুন করে বলার কিছু নেই। শিক্ষক শুধু সফল নয়, একজন ভালো মানুষ হতে শেখান। একটি সমাজে তথা দেশে শিক্ষকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মানবিক বিপর্যয় বা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ বিনির্মানে শিক্ষকরা অবিরাম ভূমিকা পালন করে চলেছেন।

শিক্ষক হচ্ছেন সভ্যতার ধারক-বাহক। শিক্ষক শুধু শিক্ষাদানই করেন না, তিনি মানুষ গড়ার কারিগরও। আমাদের সমাজে শিক্ষকতা পেশাকে মহান আদর্শ, সম্মানিত ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত করা হয়ে থাকে। সমাজের চোখে শিক্ষকরাই হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। ব্যক্তি জীবনে তারা ন্যায় ও নীতির চর্চা করবেন, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উন্নত চিন্তা আর জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন, সমাজ এমনটাই আশা করে। যারা এই মাপকাঠিতে পরবেন না, তাদের কে শিক্ষকতার পেশা গ্রহন করা উচিত নয়, সমাজ তাদের তা বারবার স্মরণ করিয়েও দেয়। শিক্ষকতা এখনো আমাদের সমাজে একটি সম্মানিত পেশা। সাম্প্রতিক কালে শিক্ষকদের বাস্তবিক অবস্থানের যে পরিবর্তন হয়েছে তা অকল্পনীয়, অভাবনীয়। একটি দেশের টেকসই উন্নয়ন তখনই সম্ভব, যখন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা ও মানব সম্পদের উন্নয়ন ঘটে।

এ প্রতিপাদ্যকে মাথায় রেখে দেশে মানসম্মত ও যুগোপযোগী শিক্ষা নিশ্চিত করতে গত এক যুগ ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন উর্দ্ধতন মহল। শিক্ষার প্রসার ও জনগণকে শতভাগ শিক্ষার আওতায় আসার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তারপরও বলতে হয় শিক্ষকতা পেশায় সুযোগ-সুবিধা এখনও আশা ব্যাঞ্জক নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রয়েছে অসম বৈষম্য।

আমাদের সমাজে শিক্ষকদের আর্থিক সচ্ছলতা কম থাকার কারণে বেশিরভাগ শিক্ষক শেষ পর্যন্ত এই পেশায় টিকে থাকতে পারেনা বিধায় অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হন। যদিও এসব শিক্ষক মন থেকে ভালোবেসে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেছেন। তারা তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছেন। কিন্তু এ কথাও তো সত্যি যে, জীবন চালানোর জন্য তো জীবিকার প্রয়োজন।

আমাদের দেশে শিক্ষকরা সামাজিক ও আর্থিকভাবে আরও বেশি বঞ্চিত। বেতন বৃদ্ধির জন্য শিক্ষকদের আন্দোলন করতে হয়। পেশা হিসেবে শিক্ষকতা এখন হতাশাজনক অবস্থায়। শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য শিক্ষকতা পেশাকে আর্ষণীয় ও সম্মানজনক অবস্থায় আনতে হবে। নতুবা শিক্ষার গুণগত মান বজায় না থাকলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ব্যাহত হবে বলে বিশ্বাস করি।

বর্তমানে ঝাঁকে ঝাঁকে বড় বড় ডিগ্রী ধারী তরুন শিক্ষকরা এ পেশায় আসছে বলে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাই শিক্ষকদের সামাজিক, পেশাগত ও আর্থিক মর্যাদা বৃদ্ধি করা এখন সময়ের দাবি। পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে।

উন্নত বিশ্বে শিক্ষকতা পেশাকে শ্রেষ্ঠ পেশা হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। কারণ এ পেশার সঙ্গে আদর্শ, সততা, নৈতিকতা ইত্যাদি অন্যান্য পেশার তুলনায় বেশি মাত্রায় জড়িত। একজন শিক্ষকের আদর্শ ও মানবিক মূল্যবোধ, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে একজন শিক্ষার্থীর নৈতিক চরিত্র গঠনে সহায়তা করে। পিতা-মাতা সন্তান জন্ম দিলেও তার চিন্তা চেতনা ও মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে তাকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন একজন শিক্ষক। কারণ সন্তানের কাছে পিতা-মাতার আদর্শ যেমন অনুকরণীয় তেমন একজন শিক্ষকের আদর্শ ও একজন শিক্ষার্থীর কাছে অনুকরণীয় হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমান সমাজে পিতৃতুল্য কিংবা জীবনে চলার পথে আদর্শ ও অনুকরণীয় হতে পারেন এমন শিক্ষকের সংখ্যা সামান্য।

একজন ভালো শিক্ষক পাঠ্যপুস্তক ছাড়াই পাঠের বিষয়বস্তু উপস্থাপন করবেন, উন্মুক্ত প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কৌতুহলী করে তুলবেন, বিষয়বস্তু অনুধাবনে জীবন ঘনিষ্ট উদাহরণ দিবেন, শিক্ষার্থীদের চাহিদা ও পারঙ্গমতার মাত্রা অনুযায়ী শিখন-কৌশল প্রয়োগ করবেন। শিক্ষক সকল শিক্ষার্থীর বোধগম্য স্বরে পাঠ উপস্থাপন করবেন। তিনি সকল শিক্ষার্থীকে সমান সুযোগ দিবেন। শিক্ষার্থীকে নাম ধরে সম্বোধন করবেন, ইতিবাচক ফিডব্যাক প্রদান করবেন। পেশাগত উন্নয়নের জন্য সহকর্মীদের সাথে পরামর্শ করবেন। সহকর্মীদের সাথে চমৎকার সম্পর্ক বজায় রাখবেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীর অভিভাবকের সাথে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করবেন। তাহলেই তিনি শিক্ষক হিসেবে সফল।

শিক্ষকের লব্ধ জ্ঞান সুন্দর উপস্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মাথায় ঢুকিয়ে দেয়ার নামই শিক্ষকতা। এজন্য শিক্ষক যতই জানুন না কেন, যদি তিনি শিক্ষার্থীদের সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দিতে না পারেন তবে তার জানাটা অনর্থক ও মূল্যহীন।

সর্বোপরী একজন মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য হবে- শিক্ষার্থীর যেকোন সমস্যায় ভালোভাবে বুঝানোর ক্ষমতা বা দক্ষতা। সব ধরণের পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়া। ছাত্র-ছাত্রীদের সত্যের পথে চালিত করা, তাদের সাথে আত্মিক বন্ধন তৈরি করা। আনন্দের সাথে পড়ানো, যাতে করে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ায় মনোযোগী হয়। শিক্ষাক্রম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা। উপস্থাপনের দক্ষতা। পরিবর্তনশীল মনোভাব। মিষ্ঠভাষী ও সদালাপী হওয়া। কথায় ও কাজে, পোশাকে ও রুচিতে, পেশায় ও কর্তব্য পালনে শিক্ষক হবেন আদর্শবান, ধর্ম প্রাণ, সত্য প্রিয়, অনুকরণীয় ও অনুসরনীয়। শিক্ষক হবেন রোল মডেল বা আদর্শ, জ্ঞানের উৎস, আনন্দের ভান্ডার। সকল শিক্ষকের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা।

লেখক, মোঃ এবনুল হাসান, সহকারী শিক্ষক, ৭৮নং ভায়াডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভায়াডাঙ্গা, শ্রীবরদী, শেরপুর।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

শিক্ষক এবং তাঁর আচরণ

শিক্ষক এবং তাঁর আচরণ

বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষকের পেশাগত মর্যাদা চাই

বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষকের পেশাগত মর্যাদা চাই

শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য এবং ভালো থাকায় শিক্ষকের ভূমিকা

শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য এবং ভালো থাকায় শিক্ষকের ভূমিকা