ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য এবং ভালো থাকায় শিক্ষকের ভূমিকা

মোঃ ফরাশ উদ্দিন

২০২৪-০৯-২১ ১৫:৩৬:০৫ /

উন্নত, সমৃদ্ধ ও আত্মমর্যাদাশীল জাতি গঠনের জন্য প্রয়োজন মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা। আর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম অন্তরায়-"শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্য"। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৮ এর অনুযায়ী বাংলাদেশের পূর্ণ বয়স্ক (adult) জনসংখ্যার ১৮.৭% এর কোন না কোন মানসিক রোগ রয়েছে। শিশুদের ক্ষেত্রে এই হারটি হলো ১২.৬% যা অত্যান্ত উদ্বেগজনক। সাধারণভাবে মানসিক স্বাস্থ্য বলতে কোন মানসিক রোগ বা সমস্যার অনুপস্থিতিকে বুঝি। আসলে তা নয়। মানসিক স্বাস্থ্য বলতে শুধু কোনও মানসিক রোগ বা সমস্যা থেকে ভালো থাকাকেই বোঝায় না বরং সামগ্রিকভাবে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক ওয়েল বিয়িং বা ভালো থাকাকে বুঝায়।

শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশ উপযোগী পারিবারিক, সামাজিক ও শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আর তাই শিশুর ভালো থাকায় শিক্ষক এবং বিদ্যালয়ের বড়ো ভূমিকা রয়েছে। বিদ্যালয়ের সামগ্রিক পরিবেশ এবং শিখন-শেখানো প্রক্রিয়া শিশুবান্ধব হলে সেটি শিশুর ইতিবাচক মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখে। আর এ কাজে শিক্ষকগণ তথা বিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

এরিক এরিকসনের মনোসামাজিক বিকাশে (Psychosocial development) তত্ত্ব অনুযায়ী ৬-১১ বছরে শিশুদের মনোসামাজিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হলে শিশুর হিনম্মন্যতা তৈরি হয়। আর এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর প্রচেষ্টাকে গুরুত্ব দিয়ে, স্বীকৃতি দিয়ে, প্রশংসা করে, বাহবা দিয়ে আরো উন্নতির পথ বাতলে দিয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন। I am the best- এ ধারনায় শিশুকে অনুপ্রাণিত করতে পারেন। একক, দলীয় বা প্রজেক্ট দিয়ে কিংবা এমন কাজ বা খেলতে দিয়ে যেখানে যত্ন ও সহমর্মিতা শেখা যায়। রাগ বা হতাশা নিয়ন্ত্রণে শেখাতে শিক্ষার্থীকে রাগ ব্যবস্থাপনা ও ইতিবাচক প্রকাশকে উৎসাহিত করা যেতে পারে। ভায়ালেন্ট এর সম্ভাবনা না থাকলে নিজেদের দ্বন্দ্ব নিজেদের মেটাতে উৎসাহিত করতে হবে। শারীরিক খেলাধুলার পাশাপাশি শিশুর মানসিক, সামাজিক, আবেগিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও ভাষাগত বিকাশ ঘটে এমন খেলার সুযোগ করে দিতে হবে। খেলার জয়-পরাজয়কে স্বাভাবিক ভাবে নিতে উৎসাহিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের পরিবর্তনের প্রতি খাপ-খাওয়ানোর ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। বিদ্যালয় পরিবেশ আকর্ষণীয় করে শিক্ষার্থীর মনে ক্রমাগত আশার সঞ্চার করাতে হবে যাতে সে অর্থবহ ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে পারে।

প্রতিটি শিশুরই এক একটি স্বতন্ত্র ব্যক্তিস্বত্ত্বা। শিখন-শেখানোর কার্যক্রমে শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি জোর দিয়ে, বৈচিত্র ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিখনকে গুরুত্ব দিয়ে, শিখন সহায়ক শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্ক তৈরী করে, শিখনে স্বাধীনতা দিয়ে, সক্রিয় ও খেলা ভিত্তিক শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করে একজন শিশুবান্ধব শিক্ষক তাঁর শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্য ও ভালো থাকার ও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারেন।

লেখক: মোঃ ফরাশ উদ্দিন, প্রধান শিক্ষক, চরহাবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রীবরদী, শেরপুর।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষকের পেশাগত মর্যাদা চাই

বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষকের পেশাগত মর্যাদা চাই

শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য এবং ভালো থাকায় শিক্ষকের ভূমিকা

শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য এবং ভালো থাকায় শিক্ষকের ভূমিকা

অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৬৫ বছর হলে বেকারত্বের হার মারাত্মক হবে

অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৬৫ বছর হলে বেকারত্বের হার মারাত্মক হবে