ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষকের পেশাগত মর্যাদা চাই

ফরিদ আহাম্মদ

২০২৪-১০-০৪ ২১:২২:১৭ /


১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর বিশ্ব ব্যাপী পালিত হয়ে থাকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এই দিবসটি শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান রক্ষা এবং সমাজে তাদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য পালন করা হয়।

ইউনেস্কোর মতে, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হয়।

বিশ্বের ১০০টি দেশে এই দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। এই দিবসটি পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রাখে। দিবসটি উপলক্ষে ইআই প্রতি বছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে যা জনসচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে শিক্ষকতা পেশার অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়।

প্রতি বছর ৫ অক্টোবর ঘটা করে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপিত হয়। এই দিবসে বক্তারা শিক্ষকদের মান-মর্যাদা বৃদ্ধিসহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিক, কলামিস্টরা শিক্ষকদের পক্ষে পত্রিকায় লেখালেখি করেন। কিন্তু শিক্ষক দিবস চলে গেলে শিক্ষকদের কথা আর কেউ মনে রাখে না। যারা এখন সরকারের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ে দায়িত্বে রয়েছেন তাঁরাও যে কোনো না কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে পড়েছেন সেটাও তাঁরা বেমালুম ভুলে যান। এমনকি শিক্ষকদের খাটো করে কথা বলতেও দ্বিধাবোধ করেন না।

এক সময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পাত্রের কাছে অনেক অভিভাবক তাঁর মেয়েকে বিয়ে দিতে চাইতেন না। কারণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক যে বেতন পেতেন তাতে সচ্ছলতার সাথে একটি সংসার চালানো কঠিন ছিল। ৮ম জাতীয় বেতন স্কেল নির্ধারণ করার পর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির তারণে শিক্ষকদের জীবনমান বর্তমানে নিম্নমুখী । শিক্ষক নেতারা বিভিন্ন দাবি নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে বার বার গেলেও আশ্বাস দেয়া ছাড়া কোনো দাবি এখনো পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। 

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদেরকে পদমর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণি ঘোষণা করা হলেও এখনো তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণি ঘোষণার ফলে ফিক্সেশন জটিলতার কারণে অনেক সিনিয়র প্রধান শিক্ষক জুনিয়র শিক্ষকদের সমান অথবা তাদের চেয়ে কম বেতন পাচ্ছেন। এই সুযোগে ফিক্সেশন জটিলতা নিরসনের কথা বলে কোনো কোনো শিক্ষক সংগঠনের ব্যানারে কিছু শিক্ষক নামধারী দালাল শিক্ষকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। 

দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের পরের ধাপেই  সহকারী শিক্ষকদের বেতন-স্কেল নির্ধারণ করার দাবি জানিয়ে আসলেও কর্তৃপক্ষ তাতে সারা দেয়নি।ফলে প্রধান শিক্ষকের সাথে সহকারী শিক্ষকদের  ব্যাপক বেতন-বৈষম্য দেখা দিয়েছে। যার ফলে সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। কর্তৃপক্ষের অনেক সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে বার বার মামলা হচ্ছে। যার জন্য সরকার কোনো সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন করতে পারছে না। শুধু তাই নয়, মামলার প্রায় সবগুলো রায় সরকারের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। যার ফলে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে বড় বাঁধা তৈরি হচ্ছে। 

সহকারী শিক্ষকদের চলতি দায়িত্ব দিয়ে প্রধান শিক্ষককের মর্যাদা দেয়া হলেও তাদের এখনো পর্যন্ত পদোন্নতি দেয়া হয়নি। যার ফলে, পুরাতন প্রধান শিক্ষক ও চলতি দায়িত্ব প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে মর্যাদার লড়াই তৈরি হয়েছে যা প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে বড় বাধা।

এখনো অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৩/৪ জন করে শিক্ষক কর্মরত আছেন। যার ফলে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকরা কাঙ্ক্ষিত স্থানে বদলি হতে পারছে না। প্রাথমিক শিক্ষক বদলি নীতিমালায় সহকারী শিক্ষকদের বদলির সময়কাল জানুয়ারি থেকে মার্চ (তিন মাস) উল্লেখ থাকায় কোনো বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হলেও বাকি ৯ মাসের মধ্যে শিক্ষক বদলির মাধ্যমে শূন্যপদ পূরণের কোনো সুযোগ নেই। যার ফলে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।তাই সারা বছর বদলি কার্যক্রম চালু রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রাথমিক শিক্ষাকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ঘোষণা দিয়েও সরকার কোনো রহস্যজনক কারণে তা বাস্তবায়ন থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে।

পরিশেষে বলব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার মূল ভিত্তি রচনা করে। অথচ তাঁরা এখনও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী তাই আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড ও প্রধান শিক্ষকদের ৯ম গ্রেডে বেতন প্রদান করে  সামাজিক ও পেশাগত মর্যাদা বাড়ানোর মাধ্যমে উপরোক্ত সমস্যাবলী চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন অবশ্যই সম্ভব।

লেখক:ফরিদ আহাম্মদ,শিক্ষক ও কলামিস্ট 
চিফ এডমিন:PTG - Primary Teachers Guild। ই-মেইল : faridptg110@gmail.com

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষকের পেশাগত মর্যাদা চাই

বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষকের পেশাগত মর্যাদা চাই

শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য এবং ভালো থাকায় শিক্ষকের ভূমিকা

শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য এবং ভালো থাকায় শিক্ষকের ভূমিকা

অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৬৫ বছর হলে বেকারত্বের হার মারাত্মক হবে

অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৬৫ বছর হলে বেকারত্বের হার মারাত্মক হবে