ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

সন্তানকে দাদির কাছে রেখে করোনা রোগীদের চিকিৎসা করছেন চিকিৎসক দম্পতি

অনলাইন ডেস্ক

২০২০-১০-১৮ ১২:৩৫:০৪ /


করোনাকে মা খুব ভয় পেতেন। নয় বছর আর চার বছরের আমার ছোট দুটো বাচ্চা মায়ের কাছেই থাকত। আমরা স্বামী-স্ত্রী দু'জনই করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছি- এ নিয়েও তিনি ভয়ে থাকতেন। আমাদের মাধ্যমে মা খুব সহজে করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। তাই করোনা পরিস্থিতি যখন খারাপের দিকে যাচ্ছে, তখন বাচ্চাদের তাদের নানাবাড়ি আর মাকে ভাইয়ের বাসায় রেখে আসি। ডায়াবেটিস, প্রেশার আর হার্টের রোগী ছিলেন মা। মায়ের যেহেতু শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না, তাই কাছে যেতাম না। দূর থেকেই দেখে চলে আসতাম। আগস্টের ২২ তারিখ মায়ের হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, আর তার আধঘণ্টার মধ্যেই মা আমাদের ছেড়ে চলে যান। মা খুব ভয় পেতেন, তাই করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি। ডাক্তার হয়েও মায়ের শেষ সময়ে পাশে থাকতে পারিনি। ডাক্তার ছেলে হিসেবে আমাকে মায়ের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু আমি কিছু করতে পারলাম না।'- এভাবেই করোনাকালীন মাকে হারানোর কথা বলছিলেন চিকিৎসক মো. সাইদুল মোস্তাকিম।

ছোটবেলা থেকে মোস্তাকিমের স্বপ্ন ছিল একজন মানবিক চিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং সেই স্বপ্ন পূরণও করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৬ বছর ধরে নিরলসভাবে মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে চলেছেন। করোনা মহামারি মোকাবিলায় শুরু থেকেই তৎপর ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪০তম ব্যাচের ছাত্র চিকিৎসক মো. সাইদুল মোস্তাকিম ও তার চিকিৎসক স্ত্রী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলোজি বিভাগের রেডিওলজিস্ট ডাক্তার উম্মে হানি।

চিকিৎসক মোস্তাকিম গত বছরের সেপ্টেম্বরে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফার্মাকোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে বদলি হন। 

এদিকে, কক্সবাজারে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হলে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় কক্সবাজার সদর হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে। সেখানে টানা সাত দিন সরাসরি করোনা রোগীদের সেবা দিয়ে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে চট্টগ্রামে আসতেন।

ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা ছিল এ চিকিৎসকের। কিন্তু ঝুঁকি জেনেও জীবন তুচ্ছ করে তিনি রোগীর সেবায় এগিয়ে এসেছেন। করোনার ভয়ে সে সময় অধিকাংশ চিকিৎসক তাদের ব্যক্তিগত চেম্বার বন্ধ রাখেন। অন্যদিকে, এ চিকিৎসক নগরীর হালিশহরে ব্যক্তিগত চেম্বারে নিয়মিত রোগী দেখেছেন। লকডাউনের সময়ে চেম্বারের পাশাপাশি টেলিমেডিসিন সেবাও দিয়েছেন। মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে নিজ উদ্যোগে এলাকায় ৫০০ মাস্ক বিতরণ করেছেন এ চিকিৎসক। করোনা পজিটিভ না হলেও এ চিকিৎসক দম্পতি করোনা সাসপেক্টটেড এবং ভাইরাল কনজেক্টিভাইটিসে ভোগেন। 

বর্তমানে ডাক্তার উম্মে হানিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিটের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি ১৪ দিন দায়িত্ব পালন করবেন, ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকেন। এতে স্বামী ও সন্তানদের কাছ থেকে আবারও এক মাসের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন এই মানবিক ডাক্তার।

ডা. মোস্তাকিম বলেন, 'শুরুর দিকে খুব বাজে অবস্থায় ছিলাম। আমরা স্বামী-স্ত্রী দু'জনই করোনা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ভালোমানের প্রটেকশন বা পিপিই ছিল না বললেই চলে। বাসায় ছোট ছোট দুটো বাচ্চা, অসুস্থ মা। শেষমেশ হঠাৎই মা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন! তারপরও চেম্বার করা বা রোগী দেখা বন্ধ করিনি। যখন ডাক্তাররা গণহারে আক্রান্ত হচ্ছিলেন, তখন সময় কমিয়ে তিন দিন চেম্বার করতাম। যখন লকডাউন দেওয়া হয় আর যাতায়াতের সুযোগও বন্ধ, তখন টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়েছি।'

এ পরিস্থিতিতে কখনও সরে যাওয়ার কথা ভেবেছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সমকালকে বলেন, 'অবশ্য শুরুর দিকে ভয় লাগত। তবু এতটুকু পিছ পা হইনি। যতটুকু সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করেছি। ওই যে একটা আগ্রহ ছিল ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করার, মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়ার- সেটাই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।' তিনি আরও বলেন, 'অনেকেই জোর করে ডাক্তারি পেশায় আসেন। কিন্তু ছোটবেলা থেকে আমার প্রচণ্ড ইচ্ছা ছিল আমি ডাক্তার হবো। আমার বাবা-মায়েরও খুব ইচ্ছা ছিল। সেই ২০০৪ সাল থেকে এ পেশায় যুক্ত আছি। সুস্থ বা অসুস্থ যাই হই না কেন, একদিন তো মরতে হবে। আর মানুষের জন্য কাজ করে মরলেও শান্তি। আখেরাতে এর ফল অবশ্যই পাব।'

সঙ্গে যোগ করে তিনি আরও বলেন, 'আমার ছোট ছোট দুটো বাচ্চা গত চার-পাঁচ মাস ধরে মা-বাবা থেকে দূরে আছে। যেহেতু দুজনেই করোনা পজিটিভ রোগীদের সেবা করছি, চাইলেও বাচ্চাদের কাছে যেতে পারছি না। দূরে রেখেও চোখের সামনে মা চলে গেলেন। নিজে ডাক্তার হয়েও মায়ের জন্য কিছু করতে পারিনি। দূর থেকে বাচ্চাদের চোখের দেখা দেখে আসি। বাচ্চা দুটো নানির কাছে। আমরা দুজনেই নিয়মিত রোগী দেখছি, চেম্বার করছি। এভাবেই চলছে দিন। পৃথিবীর এ দুঃসময়ে নিজেদের কাজকে যদি কাজে লাগাতেই না পারি তাহলে মানবজনম সার্থক হবে কেমন করে?'সূত্রঃ সমকাল

বিডি-শিক্ষা/এফএ

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

 শেরপুরে ঐতিহ্যবাহী জিকে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গ্রেফতার

শেরপুরে ঐতিহ্যবাহী জিকে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গ্রেফতার

নালিতাবাড়ীতে বছরের প্রথম দিনেই পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু

নালিতাবাড়ীতে বছরের প্রথম দিনেই পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু

একুশে পাঠচক্রের নিয়মিত আসর অনুষ্ঠিত

একুশে পাঠচক্রের নিয়মিত আসর অনুষ্ঠিত