একই সাথে দুই দেশে ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। সর্বশেষ দুই দেশে ৬ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে শুধু তুরস্কেই মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৫৪৪ জনের। আর সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৮৩২। বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোর শিরোনামে এখন এই ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের ধ্বংসযজ্ঞ দেখে আঁতকে উঠেছে বিশ্ববাসী। গণমাধ্যম ছাড়াও তুরস্ক ও সিরিয়ার প্রত্যক্ষদর্শীরা ভূমিকম্পের ছবি ও ভিডিও ধারণ করেছেন। সেখানেও ফুটে উঠেছে ভূমিকম্পের তাণ্ডবলীলা।
গত সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে ভূমিকম্প আঘাত হানে। এ সময় অনেকেই ছিলেন ঘুমের ঘোরে। ভূমিকম্প টের পেয়ে কেউ কেউ ভবন ছেড়ে দৌড়ে বের হন, গাড়িতে চেপে আশ্রয় নেন নিরাপদ স্থানে। এ সময় মুঠোফোনে তখনকার মুহূর্ত ধারণ করেছেন অনেকে। পরে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।
এমনই একজন প্রত্যক্ষদর্শী গাজিয়ানতেপ শহরের বাসিন্দা এরদেম। তিনি বলেন, ‘আমার ৪০ বছরের জীবনে কখনোই এমন পরিস্থিতিতে পড়িনি। অন্তত তিন দফায় তীব্র কম্পন টের পাই। মনে হচ্ছিল আমি একটি শিশু, দোলনায় দোল খাচ্ছি।’
তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের ইসকেন্দরামের এক বাসিন্দা টুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। সেখানে ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে।
তুরস্কের বিভিন্ন শহরে ভূমিকম্পের কবল থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। তাঁদের বেশির ভাগের ভাষ্য, জীবনে প্রথমবারের মতো এমন ভয়াবহ ও দীর্ঘস্থায়ী ভূমিকম্পের সাক্ষী হয়েছেন তাঁরা।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল থেকে উত্তরে অবস্থিত কাহরামানমারাস প্রদেশের পাজারক শহরে শত শত ভবন ধসে পড়েছে। টুইটারে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে সেখানকার সড়কের দুই ধারে ধসে পড়া সারি সারি ভবনের দৃশ্য চোখ পড়েছে।
শহরের বাসিন্দা বেইসেল এরভানের অনেক স্বজন ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন। তাঁর ভাষায়, ‘পরিবারসহ কোনোমতে ভবন থেকে বের হতে পেরেছিলাম।ধ্বংসাবশেষের মধ্য থেকে বের হওয়ার পর দেখলাম একজন ছোট্ট একটি ফাঁক গলে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁদের বাঁচাতে গেলে ভবনটি ধসে পড়ে। এতে আমার এক বন্ধু চাপা পড়েন। সেখান থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় ছিল না তাঁদের।’
এদিকে ভূমিকম্পের পর তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের বড় আকারের অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও টুইটারে ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের কারণে গ্যাসলাইন ফেটে ওই আগুন লেগেছে। আগুন কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। ভিডিওগুলোর একটি হাতাই শহরের উপকণ্ঠের বলে নিশ্চিত হয়েছে বিবিসি। শহরটি ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার দূরে।
ভূমিকম্পের পর ঠান্ডা আবহাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন প্রবীণ ব্যক্তিরা। এর মধ্যেই গাজিয়ানতেপ শহরের বিভিন্ন ভবন থেকে প্রবীণ ব্যক্তিদের বের করে আনার প্রচেষ্টার কথা জানিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দা রাসেল পেয়াগরাম। শক্তিশালী ভূমিকম্পে শহরের দুর্গ ও শিরবান মসজিদ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। রোমান সাম্রাজ্যের আমলের গাজিয়ানতেপ দুর্গ তুরস্কের অন্যতম সংরক্ষিত একটি দুর্গ।
ভোররাতে প্রথম দফায় শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর উৎপত্তিস্থলের পূর্ব ও দক্ষিণে অনেকগুলো পরাঘাত হয়। এর মধ্যেই দ্বিতীয় দফা ভূমিকম্প হয় তুরস্কে। প্রথম দফা ভূমিকম্পের পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ভবনগুলোতে উদ্ধার তৎপরতা চলছিল। তুরস্কের একটি টেলিভিশনে সেই দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করার সময় মালাতিয়া শহরে দ্বিতীয় দফায় ভূমিকম্প হয়।
ভূমিকম্পের পর গাজিয়ানতেপ শহরে সড়কে নেমে আসেন সেখানকার বাসিন্দারা। এক ব্যক্তি এমন একটি দৃশ্য ভিডিও করছিলেন। এতে দেখা যায়, অনেকটা স্বাভাবিকভাবেই লোকজন রাস্তাঘাটে চলাফেরা করছেন। কিছু কিছু গাড়িও চলছে রাস্তায়। ঠিক এমন মুহূর্তে রাস্তার পাশের একটি বহুতল ভবন হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়ে।
তুরস্কের সীমান্তবর্তী সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর এজাজের একজন বাসিন্দা বলছিলেন সেখানে কতটা আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখানকার একটি ভবনে ১২টি পরিবার আটকা পড়েছে। তাঁদের কেউই ভবনটি থেকে বের হতে পারেনি।
ভূমিকম্পে মা ও দুই ভাই-বোনকে হারিয়েছে ১৮ মাস বয়সী রাঘাদ ইসমাইল। আজাজ, সিরিয়া, ৬ জানুয়ারি
সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে ভূমিকম্পের পর অনেকেই বড় সড়কে নেমে এসেছেন। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, এক নারী বাচ্চা কোলে নিয়ে সড়কে দাঁড়িয়ে আছেন। এ সময় কাছেই একটি ভবন চোখের পলকে ধসে পড়ছে। এ দৃশ্য চোখে পড়তেই তিনি বাচ্চা কোলে নিয়ে দৌড় দিয়েছেন। এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে এই ভূমিকম্পে।
বিডি শিক্ষা/জাআ
সম্পাদক ও প্রকাশক - জাফর আহম্মেদ, সম্পাদকের উপদেষ্টা - মোঃ আল হেলাল, আইটি উপদেষ্টা- জরিফ E-mail: [email protected], Website: www.bd-shikkha.com
বাংলাদেশ শিক্ষা: রোড নং- ০৪, বারিধারা ডিওএইচএস, ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা-১২০৬