প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে আমার দুটি কথা: ফরিদুজ্জামান

মতামত || ২০২৩-০৯-১৮ ১২:১০:৫১

image


প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে আমার দুটি কথা

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুর ভবিষ্যৎ কে আলোকিত করতে হলে প্রথমে একটি শিশুর ভিত্তি হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষাকে মজবুত করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা জাতি গঠনের মূল স্তম্ভ্ভ। উন্নত জাতি গঠন ও মানব সম্পদ উন্নয়নের প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব সর্বাধিক। অন্যদিকে বলা যায়, সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার বীজ হলো প্রাথমিক শিক্ষা। বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ও মানবিক গুণ সম্পন্ন একজন আদর্শবান মানুষ হওয়ার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতির মাধ্যমে শিশুরা দেশের সম্পদে পরিণত হলে বদলে যাবে মাতৃভূমি বাংলাদেশ। 

প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষকরা পারেন একটি অন্ধকার সমাজ জাতিকে আলোকিত ও মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে। শিক্ষককে সৃজনশীল, আনন্দময় ও মজার কাজের মাধ্যমে শিশুকে শিক্ষা দিতে হবে। এমনকি প্রযুক্তি ব্যবহার করে  সুস্থ বিনোদন ও শিক্ষা একসঙ্গেই সম্ভব হতে পারে। মনে রাখতে হবে আগামী সময়ে শিশুকে এ প্রযুক্তির জগতে সাবলীল ও সুস্থভাবে বিচরণ করতে হবে। তার ব্যক্তিগত, সামাজিক ও পেশাগত নিরাপত্তা তাকেই নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য শিক্ষককে দক্ষ ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করতে হবে। 

শিখন শেখানোর পদ্ধতির মধ্য দিয়ে কোন জ্ঞান দক্ষতা বা দৃষ্টিভঙ্গিকে শিশুর একটি যোগ্যতা বলা যায়। উদাহরণস্বরূপ বাংলা বিষয়ের পঠন পাঠনের মাধ্যমে শুদ্ধভাবে ও স্পষ্ট স্বরে কথা বলতে পাড়ার দক্ষতা আয়ত্ব করার পর শিশু যদি তার পারিবারিক বা সামাজিক পরিবেশের শুদ্ধ ভাষায় ও স্পষ্ট স্বরে কথা বলতে পারে তবে সেটি তার যোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে। এজন্য একজন শিক্ষককে শ্রেণী কার্যক্রমে আঞ্চলিক ভাষা পরিহার করে শুদ্ধ ও স্পষ্টভাবে কথা বলার চর্চা করতে হবে। শিশুরা অনুকরণ প্রিয় তারা শিক্ষকদের ক্লাসরুমের বাইরেও অনুকরণ করে থাকে। শিশুদের নিয়মিত পাঠক্রমের বাইরেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরে শুদ্ধ বাংলা ভাষা, শিক্ষার গুরুত্ব তাদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। বিদ্যালয়ে সপ্তাহে একদিন সহপাঠক্রমিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শিশুদের কবিতা আবৃত্তি, গল্প পড়া ও বলা, গান ইত্যাদি অনুশীলন করতে হবে।  প্রতিদিন বাংলা বই থেকে হাতের লেখা লিখতে দিতে হবে এবং বাংলা পঠন এর উপর জোর দিতে হবে।  শিশুদের গল্পের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। 
শিক্ষার বিষয়বস্তুকে শিক্ষার্থীর কাছে আকর্ষণীয় ও আনন্দদায়ক করতে হলে শিক্ষকের হাতে পাঠ সহায়ক কিছু উপকরণ থাকা আবশ্যক। পাঠ সহায়ক উপকরণ এর সহায়তায় বেশ জটিল বিষয়কেও সহজে শিক্ষার্থীদের কাছে স্পষ্ট ও বোধগম্য করে তোলা যায়। একজন পেশাজীবী হিসেবে সফল হতে হলে শিক্ষকের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অঙ্গ হিসেবে শিক্ষা উপকরণ ও শিক্ষা সহায়ক সামগ্রী সংগ্রহ, তৈরি, ব্যবহারে নৈপুণ্য লাভের সুযোগ থাকতে হবে। 

বাংলাদেশের শিশুদের ক্ষেত্রে  একটু বেশি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় তা হলো প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিশুর ঝরে পড়া। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিশুর ঝড়ে পড়ার বহুবিধ কারণ আছে। এ কারণগুলোর উল্লেখযোগ্য কযয়েকটি হলো- ১। দারিদ্রতা, ২। শিশুশ্রম, ৩। শ্রেণিকক্ষে অমনোযোগিতা, ৪। শিক্ষকদের আচরণ, ৫। অহেতুক ভয়, ৬। বাল্যবিবাহ 

ঝরে পড়া রোধে বিদ্যালয়ের পরিবেশ আকর্ষণীয় ও আনন্দময় করে তুলতে হবে। এই লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য খেলাধুলার সুব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকদের আগ্রহ, মমত্ববোধ ও সহানুভূতিশীল আচরণ করতে হবে। শারীরিক শাস্তি সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে হবে। তাছাড়া বছরের শুরুতে প্রতিটি স্কুলে ক্যাচমেন্ট এলাকাভিত্তিক শিশু জরিপ পূর্বক ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে। নিয়মিত মা সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও হোম ভিজিট কার্যক্রম, মিড ডে মিল চালুকরণ, স্থানীয় জনগণকে বিদ্যালয়ে সার্বিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে। 

পরিশেষে বলা যায়, আজকের শিশুই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই শিশুকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হলে তাকে অর্জন করতে হবে যোগাযোগশৈলী ইংরেজি, বাংলায় স্বাচ্ছন্দ, গণিতে পারদর্শিতা ও তথ্য প্রযুক্তিতে উৎকর্ষ। শিক্ষার্থী হবে কল্পনাপ্রবণ, সৃজনশীল, বিশ্লেষণাত্মক।  তার ভূষণ হবে নীতি, আদর্শ ও দেশপ্রেম।


লেখক:ফরিদুজ্জামান, সহকারি শিক্ষক,লক্ষ্মীডাংরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,শ্রীবরদী, শেরপুর।

সম্পাদক ও প্রকাশক - জাফর আহম্মেদ, সম্পাদকের উপদেষ্টা - মোঃ আল হেলাল, আইটি উপদেষ্টা- জরিফ E-mail: bdshikkha.news@gmail.com, Website: www.bd-shikkha.com

বাংলাদেশ শিক্ষা: রোড নং- ০৪, বারিধারা ডিওএইচএস, ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা-১২০৬