প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্থাৎ প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ ও গুণগত মান উন্নয়নের মাধ্যমে সকল শিশুর জন্য একীভূত ও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের শিক্ষক, কর্মকর্তা ,কর্মচারী, অভিভাবক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সংবাদ কর্মী, স্থানীয় প্রশাসন এবং বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি সহ সংশ্লিষ্ট সকলে সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রাথমিক শিক্ষা সাধারণত আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রথম পর্যায় যার ব্যাপ্তিকাল প্রাক-প্রাথমিকের পর হতে মাধ্যমিক শিক্ষার পূর্ব পর্যন্ত। প্রাথমিক শিক্ষা অর্জিত হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ।
প্রাথমিক শিক্ষা সাধারণত ৫ থেকে ৭ বছর বয়সের মধ্যে শুরু হয়। এটি অন্যান্য মৌলিক বিষয়গুলি বোঝার পাশাপাশি পড়া, লেখা এবং গণিত বিষয়ে প্রাথমিক পারদর্শিতা অর্জনের জন্য ডিজাইন করা হয়।
ইউনিসেফ এর মতে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের অনেক গুলো ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।যেমন : ১. দারিদ্র্য হ্রাস করে। ২. শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস করে। ৩. লিঙ্গ সমতা উৎসাহিত করে। ৪. পরিবেশগত বোঝাপড়া বাড়ে।
২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানগণ সম্মিলিতভাবে অঙ্গীকার করেন যে, ২০১৫ সালের মধ্যে তারা নিজ নিজ দেশে আটটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়ন করবেন। এমডিজি এর আটটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল "সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন।"। বাংলাদেশে যা ইতোমধ্যে অর্জিত হয়েছে।
মানসম্মত শিক্ষা বলতে বোঝায় যে শিক্ষা বোধসম্পন্ন মানুষের জ্ঞানের বিকাশ ঘটায় এবং যার মাধ্যমে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং নৈতিক মূল্যবোধের প্রসার ঘটে। অন্যভাবে বলা যায়, একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ডের আলোকে যখন কোনো শিক্ষাকে বিচার করা হয়, সেটি হয় মানসম্মত শিক্ষা। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচি হলো : পাঠ্যবই ও শিক্ষাসামগ্রীর মান বাড়ানো ও যথাসময়ে বণ্টন, শিক্ষকদের সক্ষমতা বাড়ানো, নতুন স্কুল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা, পুরনো প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢেলে সাজানো এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা।
মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে উপযোগভিত্তিক শিক্ষার সাথে জোরালো সামাজিক ও মানসিক মূল্যবোধে বলীয়ান শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের বিভিন্ন অন্তরায় গুলো হলো: একই স্তরের শিক্ষার্থীদের শেখার ক্ষেত্রে অসমতা, বিভিন্ন ধরনের শিক্ষার মধ্যে ব্যাপক ফারাক, দুর্বল শিখন মূল্যায়ন, শিক্ষকের উন্নয়ন ও জবাবদিহিতা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা, শিক্ষকের প্রণোদনার অভাব, ঝরে পড়ার উচ্চহার, অতি দরিদ্র বা দুর্গম এলাকার শিশু ভর্তি না হওয়া, প্রাথমিক পরবর্তী পর্যায়ে শিক্ষার্থী বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থী হ্রাস, নগর অঞ্চলে দরিদ্র জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং মানসম্মত দক্ষতা প্রশিক্ষণমূলক শিক্ষার অভাব ইত্যাদি।
জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ: লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও ইতিবৃত্ত:
মানব সম্পদ উন্নয়ন এবং মনুষ্যত্ব বিকাশে শিক্ষার কোন বিকল্প নাই। প্রাথমিক শিক্ষাই হলো সকল শিক্ষার মূল ভিত্তি। এ উপলব্ধি থেকেই "চলো, সবাই স্কুলে যাই" এই প্রতিপাদ্য নিয়ে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা ও প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যকে সামনে রেখে ৯ জানুয়ারি ২০১১ থেকে শুরু হয়েছে 'জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ - ২০১১।' প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ১০০%-এ উন্নীতকরণ , ঝরে পড়া রোধ, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি বৃদ্ধিকরণ ও প্রাথমিক শিক্ষা চক্র সমাপ্ত নিশ্চিতকরণের নিমিত্ত প্রাথমিক শিক্ষার সাথে জড়িত স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে প্রতি বৎসর উদযাপন করা হয় জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর দেশব্যাপী ক্রীড়া ও সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা, শিক্ষা মেলাসহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এবছর জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৪ এর প্রতিপাদ্য বিষয় হলো "শিশু বান্ধব শিক্ষা, স্মার্ট বাংলাদেশের দীক্ষা"!
সারাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৪ পালন উপলক্ষে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর দেশব্যাপী বিদ্যালয়, উপজেলা, জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, র্যালি, আলোচনা সভা ও শিক্ষা মেলা সহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুসারে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা রাজশাহীর উদ্যোগে ২৬ থেকে ২৮ মে ২০২৪ তিন দিনব্যাপী জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৪ অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে।
রূপকল্প ২০৪১ অর্জনের পথে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে রূপকল্প ২০৪১ গৃহীত হয়েছে। যোগ্য ও দক্ষ মানবসম্পদ এই রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের পূর্ব শর্ত। আমাদের সংবিধানের ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদে দেশের সকল শিশুর শিক্ষা নিশ্চিতকরণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের উপর ন্যাস্ত। বিধায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সকল শিশুর জন্য মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণের দায়িত্ব পালন করে আসছে। সরকারের বিভিন্ন যুগোপযোগী কার্যক্রম গ্রহণের ফলে বাংলাদেশে বদলে যাওয়া দৃশ্যপট অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে দৃশ্যমান। ২০০৬ সাল ও ২০২৩ সালের অগ্রগতির তুলনামূলক চিত্র এর প্রমাণ বহন করে। নিম্নে কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলো।
(ক)
খাত: স্বাক্ষরতার হার
২০০৬ সাল: ৪৫%
২০২৩ সাল: ৭৬.৮%
মন্তব্য: ২ গুণ বৃদ্ধি
(খ)
খাত: প্রাথমিক শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ
২০০৬সাল: ৫৪%
২০২৩ সাল: ৯৮.২৫%
মন্তব্য : ২ গুণ বৃদ্ধি
(গ)
খাত: ঝরে পড়ার হার
২০০৬ সাল: ৪৯%
২০২৩ সাল: ১৩.১৫%
মন্তব্য: ৪ গুণ হ্রাস
(ঘ)
খাত: প্রাথমিক বিদ্যালয় সংখ্যা
২০০৬ সাল: ৬৫,৬৭২ টি
২০২৩ সাল: ১,১৮৮৯১ টি
মন্তব্য: প্রায় ২ গুণ বৃদ্ধি
(ঙ)
খাত: প্রাথমিক শিক্ষক সংখ্যা
২০০৬ সাল: ৩৪৪৭৮৯ জন
২০২৩ সাল: ৬,৫৭,২০৩ জন
মন্তব্য: ২ গুণ বৃদ্ধি
(চ)
খাত: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মহিলা শিক্ষক সংখ্যা
২০০৬ সাল: ১৫৩০৪১ জন
২০২৩ সাল: ৪,০৩,১৯১ জন
মন্তব্য: ৩ গুণ বৃদ্ধি
লেখক: মোঃ সানাউল্লাহ, বিভাগীয় উপপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা, রাজশাহী বিভাগ।
সম্পাদক ও প্রকাশক - জাফর আহম্মেদ, সম্পাদকের উপদেষ্টা - মোঃ আল হেলাল, আইটি উপদেষ্টা- জরিফ E-mail: bdshikkha.news@gmail.com, Website: www.bd-shikkha.com
বাংলাদেশ শিক্ষা: রোড নং- ০৪, বারিধারা ডিওএইচএস, ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা-১২০৬